গুরু ভক্তি


পরমপিতা প্রেমময় তিনি এক ছিলেন নিজেকে বহু করার ইচ্ছা তাঁর ভিতরে হয়েছিল। ইচ্ছা শক্তির পরেই এই জগৎ সৃষ্টি হলো। এই ইচ্ছা শক্তিটাই সৃষ্টি তার ভিতরেও সীমা আছে। সেখানে ও প্রেম আছে। এই সৃষ্টি জগৎ তার ও একটি সীমা আছে। তিনি অসীম তাই এর ভীতরে সীমা আছে তাই প্রেমের সীমাবদ্ধ ভাব ভক্তি। এই ভক্তি পার না করলে প্রেমে পরিণত হতে পারবো না এবং পরমপিতার কাছে যেতে পারবো না।তাই জন্মগ্ৰহণ করতে হয় ভক্তি গুণ অর্জন করে প্রেমে পরিণত হতে হয়


একটি শিশু যখন এই পৃথিবীতে জন্মগ্ৰহণ করে, পিতা ,মাতা ও গুরুজনদের কি তখন থেকেই ভক্তি করতে পারে?ঐ শিশু তখন ভক্তি সম্বন্ধে কিছুই বোঝে না  শিশুর মধ্যে ভক্তি সুপ্ত অবস্থায় থাকে। ধিরে ধিরে সে বড়ো হ‌ওয়ার সাথে সাথে পিতা মাতার সাহচার্যে ভক্তি শেখে। শিশুটির মধ্যে ধিরে ধিরে কৃতজ্ঞতা বোধ জন্মায়। ঐ কৃতজ্ঞতা বোধের জন্য শিশুটি বুঝতে পারে আমি পিতা মাতার থেকেই জন্মগ্ৰহণ করেছি তাই প্রথমে শিশুটি ভয় পেতে শুরু করে তারপর সে বড়ো হ‌ওয়ার সাথে সাথে ভক্তি শেখে।


কিন্তু একটি শিশু এবং আমরা প্রত্যেকেই পার্থিব শিক্ষা পেয়ে থাকি পিতা,মাতা,এবং শিক্ষকের কাছ থেকে। এই ভক্তি যে একটি গুণ এই শিক্ষাটি আমাদের কেউ শেখায় না। ঐ  গুণ সম্বন্ধে যখন‌ই আমরা জানার চেষ্টা করবো তখনই আমাদের আধ্যাত্মিক জগৎ সম্বন্ধে জানতে হবে ।এই আধ্যাত্মিক জগৎ  জানার জন্য আমাদের গুরুর প্রয়োজন, তিনিই একমাত্র ভক্তি গুণ শেখাতে পারবেন।কারণ তিনি আমাদের দীক্ষা প্রদান করে নতুন জন্ম দিয়েছেন। গুণ শিখতে সাহায্য করেছেন। আমাদের আগে গুণ সম্বন্ধে জানতে হবে তারপর‌ই তো আমরা ভক্তির যে রস  আছে তা আমরা জানবো।


১)প্রথমেই আমরা জানবো ভক্তি কাকে বলে?


"ভয়ে ভয়ে ভালোবাসাকে ভক্তি বলে।

‌ ভক্তি দুই প্রকার ; যথা পার্থিব ভক্তি ও ঈশ্বরভক্তি।

মাতা,পিতা, গুরুদেব,ও অন্যান্য মহাত্মাদিগের প্রতি যে ভক্তি তাকে পার্থিব ভক্তি বলে।

আর পূর্ণ পুরুষ পরমপিতার প্রতি যে ভক্তি তাকে ঈশ্বর ভক্তি বলে।


ভক্তি যাকে করা হয় তিনি গুরুজন কিন্তু ঐ গুরুজন মাত্র‌ই যে ভক্তি ভাজন তা নয়।কোনো গুরুজনের প্রতি যদি প্রেম হয় তবে তিনি গুরুজন‌ই থাকবেন  ভক্তিভাজন হবেন না।


যিনি এই পৃথিবীতে আমাদের সৎপথ ও ঈশ্বর রাজ্যে গমন করার পথ প্রদর্শন করেছেন , জ্ঞানের আলো প্রদান করেছেন,সৃষ্টজগতের সর্বপ্রধান অবলম্বন তিনি যেখানেই থাকেন না কেন বিপদ কালে আমাদের রক্ষা করেন। উদ্ধারের উপায় বলে দেন তিনিই আমাদের পরমারাধ্য মহাত্মা গুরুদেব। তিনিই আমাদের মহামূল্যবান রত্ন দিয়ে গেছেন এই সত্যধর্ম্ম । আমাদের বলে গেছেন মাতা ,পিতা,শিক্ষক,রাজা ও অন্যান্য গুরুজনদের প্রতি যথোচিত ভক্তি করবে। তিনি দেবদেবী গণের প্রতি ভক্তি করতে বলেছেন ,পবিত্র আত্মার প্রতি ভক্তি করতে বলেছেন।যে সকল মহাত্মারা জগতে সিদ্ধ ও পরমোন্নত তাঁদের যথোচিত ভক্তি করতে বলেছেন । এই যে আমরা যাঁর কৃপায় সৎপথ ও জগদীশ্বর লাভের পথ প্রাপ্ত হয়েছি ঐ গুরুদেবের প্রতি প্রগাড় ভক্তি করতে হবে।


কিন্তু আমরা কি সবাই গুরুদেবের আদেশানুসারে সঠিক পথে চলছি? গুরুদেবের প্রত্যেকটি বাক্য মানতে পারছি? 


"অনন্ত অসীম সত্য -ধর্ম ক্ষীরমহার্ণবে।

ডুবরীরা মহারত্ন লভিতেছে ডুবে ডুবে"।



এখানে যার শেষ নেই অনন্ত অসীম এই সত্যধর্ম্ম ,ডুবরী গুরু সেই সাগর থেকে আমাকে ভক্তি রত্ন তুলে দেবেন। আর মহারত্ন এক একটি সিদ্ধি ও একত্ত্ব । গুহ্য বিষয় তিনিই জানাতে পারেন এই মহারত্ন যিঁনি লাভ করেছেন।


"গুরু ভক্তি পার করিলে প্রেম পারেতে মেলে,

সকল ভার তারে দিলে নিরন্তর রবে সুখ সাধি"। 

ভক্তি পার করতে পারলে প্রেম পারেতে মেলে অর্থাৎ আমাদের গুরু শেখান ভক্তি গুণ ঐ গুণ যদি আমি রপ্ত করে গুণী হতে পারি এবং গুরু বাক্য লঙ্ঘন না করে সঠিক পথে চলে একত্ত্ব পেতে পারি এবং ভক্তি গুণ অর্জন করে পরমপিতার প্রেমে পরিণত হতে পারি তবেই গুরু ভক্তি পার করে ঐ প্রেম পারের সন্ধান পাবো। তাই পার্থিব ভক্তি আমাদের সকলের করার প্রয়োজন কিন্তু গুরুভক্তি আমাদের অন্তরের বিষয়।গুরুভক্তি যদি অন্তর দিয়ে না করি তাহলে আমরা গুরুর পরশমনি অনুভব করতে পারবো না।